রোহিঙ্গা শিবিরে সীমাহীন দুর্ভোগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বৃষ্টি আর বাতাসে জবুথবু অবস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। থেমে থেমে বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। গতকালও দিনভর বৃষ্টি আর বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় অনেক পরিবার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ে। দু’চালা ঘর ও ত্রিপলের ছাউনিতে অতিকষ্টে রাত ও দিন পার করেছে তারা।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প দুইয়ে নুর আয়েশা নামের এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। নিজের ও বোনের ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে ৫ জন।

হঠাৎ বৃষ্টি আর বাতাসে তাদের খুব কষ্ট পোহাতে হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের ঘর বলতে পলিথিনের ছাউনি। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন ঘরের ভেতরে কাদা হয়ে যায়। তখন বসেও থাকা যায় না। আর বাতাস হলে আরো ভয়ের মধ্যে থাকি।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কথা হয় গোলজার বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, বৃষ্টিতে সব ভিজে গেছে। তার ওপর ছিল বাতাস। ভয়ে ছিলাম বাতাসে যদি দুর্বল ঘরগুলো উড়ে যায় বা ভেঙে যায়। তাহলেতো আরো বিপদ। তাই বৃষ্টি আর বাতাসের সময় আল্লাহকে স্মরণ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম। একই ক্যামেপর আরেক রোহিঙ্গা নুর আহম্মদ বলেন, তার ঘর পাহাড়ের একদম ঢালুতে। তাই যে কোনো মুহূর্তে মাটি পড়ে ঘর ভেঙে পড়তে পারে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মাটি-পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন ঘরের মধ্যে কাদা-মাটিতে একাকার হয়ে যায়। ঘরে থাকার উপায় থাকে না। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির পরে ঘরের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে গেছে। এখন আছি পরিচিত আরেকজনের ঘরে। তার ঘরেও মানুষ বেশি। সে কারণে ২/৩টি ঘরে ভাগ হয়ে আছি। মোটকথা বৃষ্টি আর বাতাস হলে খুব ভয়ের মধ্যে থাকি। তিনি বলেন, আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে এখানে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক মানুষ আছে। কিন্তু ঝড় বৃষ্টি হলে তারা কি করবে?
মোছনি ক্যামেপ অবস্থানরত আসির আলী বলেন, জীবন বাঁচাতে আজ আমি এখানে পড়ে আছি অথচ মংডুতে আমার অনেক বড় বাড়ি ছিল। সেখানে যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদে মানুষ আমার ঘরে আশ্রয় নিতো। সারাজীবন আমি অনেক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছি। ভাত কাপড় দিয়েছি অথচ আজ আমি নিজেই আশ্রয়হীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ঋণ কখনো কোনো রোহিঙ্গা শোধ করতে পারবে না। বাংলাদেশ সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। খাবার থেকে শুরু করে চিকিৎসা সব কিছু করছে। আর এত বেশি ত্রাণ দিচ্ছে এখন খেতে না পেরে অনেকে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে এখানে আসার পরে কয়েকবার বৃষ্টির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যখন বৃষ্টি হয় তখন পরিবার পরিজন নিয়ে খুব বিপদে থাকি। কারণ পাহাড়ের জমিতে আমরা যে ঘর করেছি মোটা একটি পলিথিন দিয়ে ইতিমধ্যে পলিথিনে কয়েকটি ফুটো হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টি হলে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। আর জোরে বাতাস হলে পলিথিন ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এ ব্যাপারে লেদা ক্যামেপ কর্মরত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় বেশ নিয়ন্ত্রণে। তবে বৃষ্টি হলে তাদের মধ্যে একটি আতংক তৈরি হয়। সব ঘর কাঁচা এবং খুবই নরম হওয়ায় বৃষ্টি এবং বাতাস হলে যে কোনো মুহূর্তে নষ্ট হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। আমি দেখেছি, আকাশে ভারি মেঘ হলেও তারা খুব দুঃশ্চিন্তায় থাকে।
কুতুপালং ক্যামেপ কর্মরত এনজিও কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, এখানে কিছু বাড়ি আছে একদম পাহাড়ে, আবার কিছু আছে পাহাড়ের ঢালুতে। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারি বৃষ্টি হলে এখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও আছে। আর স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে সঙ্গে বাতাস হলে ওইসব ঘর এমনিতেই ভেঙে পড়বে। অবশ্য এর চেয়ে বেশি কিছু করা আপাতত সম্ভবও নয়। এত বেশি মানুষকে ভালোভাবে ঘর তৈরি করে দিতে গেলে অনেক জায়গা এবং সহযোগিতার দরকার।
এ ব্যপারে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবন মান উন্নয়নে সব ধরনের সেবামূলক কাজ করছে সরকার। এখানে স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে পানি স্যানিটেশন এবং পুষ্টি সবদিকে নজর রাখা হচ্ছে। আর কিছু প্রাকৃতিক ব্যাপার আছে। সেখানে কারো কিছু করার থাকে না। এর মধ্যে ঝড় বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটা ঠিক যে বৃষ্টি বা ভারি বাতাস হলে রোহিঙ্গাদের কিছু সাময়িক সমস্যা হয়। তবে আমার জানা মতে, এখানে প্রচুর দেশি বিদেশি সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। সব দিকে শৃঙ্খলা ফিরেছে। আর তাদের সবদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর